বার্ণপুরে ইস্কো ইস্পাত কারখানার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি,বাঙালি মনে রাখেনি স্যার বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়-কে

‘বাঙালির দ্বারা ব্যবসা হবে না’ – এই প্রবাদ আমরা সকলেই শুনেছি | কিন্তু এই প্রবাদকে মিথ্যে প্রমাণ করে একসময় এমন বাঙালি শিল্পপতি বাংলার শিল্পের দিশা দেখান, বাংলার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি হলেন, বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়……… খুব বেশিকাল আগের কথা নয়, এই ১৯ শতকেই খাস কলকাতার শিল্পপতি মহলে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
ইস্পাত কারখানা ইস্কোর নাম নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন। বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ই ১৯১৮ সালে মার্টিন বার্ন কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বার্নপুরে একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলেন। যার বর্তমান নাম আজকের ইণ্ডিয়ান আয়রন অ্যাণ্ড স্টিল বা ইস্কো। বুঝতেই পারছেন এই বিশাল ইস্পাত কোম্পানির তিনিই প্রতিষ্ঠাতা।এতেই শেষ নয়। বীরেন্দনাথ মুখোপাধ্যায় শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। ১৯৩৩ সালে তিনি আবার কলকাতায় অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস স্থাপন করেন।
তিনি তৎকালীন ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (বর্তমানে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার) কলকাতা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফেলো, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরিচালন পর্ষদের সভাপতি ও আইআইটি খড়্গপুরের গভর্নিং বডির সদস্যসহ বহু সাম্মানিক পদে আবৃত ছিলেন।জীবনে অনেক সন্মানও পেয়েছেন। ১৯৪০-৪১ সালে কলকাতার শেরিফ হন। একইসঙ্গে তিনি ১৯৪২ সালে নাইট উপাধি পান ও ১৯৪২ সালে বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ‘স্যার’ উপাধিও পান। বলাবাহুল্য পশ্চিমবঙ্গের তিনিই শেষ ‘স্যার’ উপাধিপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব।
এছাড়া তিনি স্টিল কর্পোরেশন অব বেঙ্গলের সভাপতিও হয়ে ছিলেন। পাশাপাশি তিনিই দেশে প্রথম বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় বৈদেশিক মুদ্রায় ভারী শিল্পের প্রসার ঘটান। তাঁরই কর্মোদ্যমে দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
বাংলার এমন গর্বের সন্তান বীরেন্দ্রনাথের জন্ম কলকাতায়। পিতাও ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। মাতা লেডি যাদুমতী। বীরেন্দ্রনাথের বাবা দেশে শিল্পের পথপ্রদর্শক ছিলেন। বীরেন্দ্রনাথ নিজে শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার পর কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ হতে বি.এ ও এম.এ পাশ করেন। এরপর দেশে ফিরে ১৯২৪ সালে মার্টিন অ্যান্ড কোং কোম্পানিতে যোগ দেন। মার্টিন এণ্ড কোম্পানিতে যোগদানের সাত বছরের মধ্যে তিনি বার্ন কোম্পানির এবং ১৯৩৪ সালে মার্টিন কোম্পানির অংশীদার হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ওই দুই কোম্পানি যুক্ত হয়ে মার্টিন-বার্ন কোম্পানিতে পরিণত হলে স্যার বীরেন্দ্রনাথ মুখার্জি তার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন।
এদিকে ১৯৩৬ সালে পিতার মৃত্যুর পর সমস্ত কর্মকাণ্ডের ভার তাঁর উপর এসে পড়ে । ব্যক্তিগত জীবনে ১৯২৫ সাল বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক ফণীভূষণ অধিকারীর কন্যা রাণু অধিকারীকে বিবাহ করেন। ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় আবহে রবীন্দ্র সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা রাণুও প্রকৃত অর্থে শিল্পানুরাগী লেডি রাণু মুখার্জি হয়ে উঠেছিলেন। স্বামীর পর তিনিও নাইট উপাধিতে ভূষিত হয়ে ছিলেন। এমন বাঙালি শিল্পপতি দম্পতি সত্যিই বাংলার বড় গর্ব।