বাঙালি অলস ? বাঙালি অকর্মণ্য ?

বাঙালি অলস! বাঙালি কাজে ফাঁকি দেওয়ায় ওস্তাদ! উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবীদের কথায় এসব উঠে আসে। একটা প্রশ্ন- বাংলায় কত শতাংশ কৃষক ও মজুর? কৃষক শ্রমিকরা অলস? যে চা খেতে খেতে আপনি এই ভাট দেন, জানেন সেই চা বাগানের শ্রমিকরা ১০০ টাকার জন্য দিনে কতক্ষণ খাটে? যে ভাত খেয়ে ভাতঘুম দিয়ে বিকেলে আড্ডা জমান, সেমিনারে ভাষণবাজী করেন, সেই ধান চাষে একটা কৃষক কতটা ঘাম ঝরায়? একটা ফ্যাক্টরিতে ২০০ টাকার জন্য একটা শ্রমিক জীবন বাজি রেখে কি খাটুনি খাটে জানেন?
যার হাতের রান্না খেয়ে নন্দনে বা অফিসে বসে বাঙালিকে তীরে বিদ্ধ করেন, জানেন তারা অনেকেই মাত্র ৬-৭ হাজারের জন্য ভোর তিনটেয় সুন্দরবনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলকাতায় চারটে বাড়িতে রান্না করে আবার ফিরে বাড়ির কাজ করে, ছেলেমেয়ে মানুষ করে।
রোজ বনগাঁ লোকাল দেখেন? ৮-১০ হাজার আয়ের জন্য ঝুঁকি নিয়ে কত লাখ লাখ মানুষ কলকাতায় কাজ করতে আসে। আপনি/আপনারা এসব জানেন না নিশ্চয়ই। কারণ ওই ভিড় ট্রেনে কোনোদিন চড়েননি। কিন্তু আপনি বলবেন বাঙালি অলস। গ্রামে ইঁট ভাটায় মহিলারাও কাজ করে, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও। মহিলারা মাঠে খাটে। মহিলারা দিনমজুরের কথা বলে। জানেন নির্মাণ শ্রমিকদের খাটুনির কথা। যে কারেন্টের দয়ায় এসিতে বসে ভাট মারেন, জানেন কয়লা শ্রমিকদের কথা? আপনারা জানেন না নিশ্চয়ই। আপনারা দেখেন, পাড়ার ৬৫ বছরের রিক্সাওয়ালা কি কষ্ট করে। তারা বাঙালি না? সুন্দরবন, জঙ্গল মহলের মানুষ বাঁচার জন্য কত কষ্ট করে জানেন?
আপনারা বাঙালি মানে উচ্চ মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শহুরে বাঙালি বোঝেন। অর্থাৎ ৭-১০% বাঙালিকে আপনি বাঙালি ভাবেন। কারণ ওটাই আপনার জগৎ। অথচ আপনি/আপনারা নিজেকে বাঙালির প্রতিনিধি ভাবেন। সুখী বাঙালি সব বাঙালিকে অলস ভাববে এটাই স্বাভাবিক।
বাঙালি অলস না। গণ বাঙালি অলস না। অলস উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তের একাংশ। যারা অফিসে বড় চাকরি করে, যারা সংস্কৃতি চর্চা করে- তারা নিজেদের চারপাশ দেখে বাঙালিকে অলস দেগে দেন। বাঙালি সারাদিন ঘাম ঝরাচ্ছে। বাঙালি ফ্যাক্টরিতে, সর্বত্র কাজ করছে। তাই একটা জাতিকে অলস দাগবেন না। যারা দাগেন, তারা বাঙালিকে চেনে না।