দেশের দ্বিতীয় টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পদ্মশ্রী পেলেন মৌমা দাস,মেয়েকে উৎসর্গ করলেন পুরস্কার

মা হওয়ার পর প্রায় ১৮-২০ মাস কোনো প্রতিযোগিতায় তিনি নেই, ফলে প্রচারের আলোতেও নেই। বর্তমানে তিনি অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এ কর্মরত। কিন্তু ২৫ শে জানুয়ারির একটা সংবাদ বাঙালী ক্রীড়াজগতকে আন্দোলিত করে তুলেছে ।বলছি, ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ টেবিল টেনিস তারকা মৌমা দাসের কথা ।
মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন মৌমা দাস, সেবার ইংল্যান্ডে বিশ্ব টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় তিনি তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত যেতে সমর্থ হন। এরপর কিছু বছর চোটের জন্য তিনি অংশগ্রহণ করেননি। চোট সারিয়ে তার নতুন যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে, এইসময় থেকেই মৌমা দাস ২০১৮ পর্যন্ত সতেরো (২০০৫ ব্যতীত) বছর বিশ্ব টেবিলটেনিস প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন ব্যক্তিগত ও দলগত বিভাগে। টানা এতবছর দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার ফলে তিনি হয়েছেন এক বিশেষ শিরোপার অধিকারী – থাইল্যান্ডের কোমওয়ান নান্থানা’র সাথে যুগ্মভাবে বিশ্ব টেবিলটেনিস প্রতিযোগিতায় এশিয়া থেকে সর্বাধিক বার অংশগ্রহণকারী হিসেবে গণ্য হয়েছেন মৌমা দাস ।
মৌমা দাসের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম সোনা জয় ২০০০ সালে এশিয় স্তরের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় । বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সাথে সাথে কমনওয়েলথ গেমসেও তার পদকের ঝুলি কিন্তু উপচে পড়ার মত | ২০০১ সাল থেকে তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন, প্রত্যেক বারেই কখনও দলগত বিভাগে কখনও ডাবলস্ এ আবার কখনও মিক্সড ডাবলস্ এ ব্রোঞ্জ বা রৌপ্য পদক পেয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত বিভাগে এই প্রতিযোগিতায় তার প্রথম পদক আসে ২০০৯ সালে এই বছর তিনি ব্রোঞ্জ জেতেন। এরই মাঝে ২০১৩ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে অনন্য নজির রাখার জন্য ভারত সরকার তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রীড়া সন্মান অর্জুন পুরস্কার প্রদান করে। ২০১৫ সালের প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত, দলগত ও মিক্সড ডাবলস্ বিভাগে রৌপ্য পদক জয়ের মধ্য দিয়ে মৌমা দাস হয়ে যান কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের সর্বাধিক পদকজয়ী টেবিলটেনিস খেলোয়াড়।
এত কিছু সত্ত্বেও মৌমা দাসের ট্রফি রুম যেন অপূর্ণ ছিল কারণ সোনা জয় তার অধরা রয়ে গিয়েছিল ! কিন্তু বিধাতা হয়তো বিমুখ হয়নি, তাই মুচকি হেসে অপেক্ষা করান আরও তিন বছর | ২০১৮’র কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় মহিলা টেবিলটেনিস দল সোনা জেতে। এই ম্যাচে মাধুরিকা পাটকারের সাথে জুটি বেঁধে ডাবলস জিতে প্রতিপক্ষের সাথে ফলাফলে সমান থাকা দলকে মূল্যবান লিড এনে দেন মৌমা এবং শেষ পর্যন্ত ৩-১ ব্যবধানে সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে দেয় ভারতীয় দল | বৃত্ত পূর্ণ হল মৌমা’র | সেই সাথে ডাবলস এও আসে রৌপ্য পদক । মৌমা দাস অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছেন দুবার, ২০০৪ ও ২০০১৬’র প্রতিযোগিতায় |
মৌমা দাস তাঁর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার, সাথে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন ও গৌরবান্বিত করেছেন, হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম নাগরিক। তাই প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারত সরকার তাঁকে দেশের বরণ্য ব্যক্তিদের তালিকায় যুক্ত করেছেন, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সন্মান পদ্মশ্রী পুরস্কারে সন্মানিত করে | মৌমার এই সাফল্যে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার ক্রীড়ামহলে | পদ্মশ্রী সম্মানের ৬৭ বছরের ইতিহাসে মৌমা দেশের মাত্র দ্বিতীয় টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরস্কার পেলেন। এর আগে ২০১৯ সালে শরথ কমল প্রথম টিটি খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরস্কার পান | মেয়েকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন মৌমা |
– কৌস্তভ বিশ্বাস