পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক হয়েও সাধারণ মানুষের চিকিৎসার দায়িত্বও দিব্যি সামলাচ্ছেন আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর

নারী সত্যিই অনন্যা, নারী সত্যিই দশভূজা। আর এই দশভূজা রূপের বাস্তব প্রতিচ্ছবি প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছটপটে তরুণী আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। ভাল ডাক্তারের অনেক উদাহরণ আমরা শুনেছি। ভাল প্রশাসকও দেখেছি। কিন্তু কেউ যদি একইসঙ্গে ভাল প্রশাসক আর ভাল ডাক্তার দুটোই হন। আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর কিন্তু পুরুলিয়ার এডিএম হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় জনপ্রিয় সবার ডাক্তার দিদি হিসাবেও! অবাক হলেন?
পড়াশুনায় বরাবরের মেধাবী আকাঙ্ক্ষা ২০১৪ সালে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। এরপর তিনি শহরে প্র্যাকটিস, অর্থ, খ্যাতি এইসবের পথ বেছে নিতেই পারতেন। কিন্তু ব্যতিক্রমী আকাঙ্ক্ষা বরাবরই মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। আর তাই যেই বছর ডাক্তারি পাশ করলেন, সেই বছরই তিনি ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দেন। সাফল্য মেলে সেখানেও। ডাক্তারি ডিগ্রির পাশাপাশি এক বছরের মধ্যেই পান আইএএস ডিগ্রি। ২০১৫ সালের ব্যাচের আইএএস ক্যাডার হিসাবে যোগ দেন। পুরুলিয়ার এডিএম হন।
সেই শুরু। এরপর ধীরে ধীরে পুরুলিয়াবাসীর ঘরের লোক হয়ে ওঠেন আকাঙ্ক্ষা। তাঁর বাবাও একজন চিকিৎসক। তাই ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে তো ছিলই। একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে থেকে কাজ করার কারণে প্রশাসক হওয়া। একবার মহকুমা শাসক হিসেবে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার আসেননি। নিজেই এরপর রোগী দেখতে বসে যান। সেদিন প্রায় ৮০-১০০ জন রোগী দেখেন।
তারপর থেকে নিজের ছুটির দিনগুলো মাঝে মাঝেই রোগী দেখেন। একইসঙ্গে মিষ্টি ব্যবহারের মাধ্যমে এলাকার মানুষদের সুখ – দু:খ, সমস্যার কথাও জেনে নেন আকাঙ্ক্ষা। এতে নিজের প্রশাসনিক কাজেরই খুব সুবিধা হয়।
তাঁর মতে, শুধু চিকিৎসক হিসাবে মানুষের জন্য সবটা করা সম্ভব নয়। প্রশাসক হিসেবে বরং ক্ষমতা বেশি থাকায় একটু বেশিই মানুষের কাজে আসা যায়। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার থাকলেও তিনি পাশে বসে মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সুবিধা অসুবিধা সব জেনে নেন। প্রশাসক হিসেবে তাঁর অনেক দায়িত্ব। কিন্তু এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাকেও সমান প্রাধান্য দিতে চান আকাঙ্ক্ষা। সেটাকেও দায়িত্ব হিসাবেই ভাবেন। এভাবেই নিজের পেশা আর দায়িত্বকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মানুষের পাশে থেকে মানুষের কাজ করে যাচ্ছেন আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর।